Tuesday, February 16, 2016

সূরা-ই-ফাতিহার মাহাত্ন্য ও ফযীলত

মুসনাদ-ই-আহমাদে হযরত আবু সাইদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছেতিনি বলেনঃ আমি নামায পড়ছিলাম,এমন সময় আমাকে রাসুলুলাহ (সঃ) আমাকে ডাক দিলেন ,আমি কোন উত্তর দিলাম না। নামায শেষ করে আমি তার নিকট উপস্থিত হলাম। তিনি বলেন এতক্ষণ তুমি কি কাজ করছিলে? আমি বললাম হে আল্লাহর রসূল (সঃ)! আমি নামাযে ছিলাম। তিনি বলেন আল্লাহ তা’আলার এ নির্দেশ কি তুমি শুননি?
يٰأَيُّهَا ٱلَّذِينَ آمَنُواْ ٱسْتَجِيبُواْ لِلَّهِ وَلِلرَّسُولِ إِذَا دَعَاكُم لِمَا يُحْيِيكُمْ وَاعْلَمُواْ أَنَّ ٱللَّهَ يَحُولُ بَيْنَ ٱلْمَرْءِ وَقَلْبِهِ وَأَنَّهُ إِلَيْهِ تُحْشَرُونَ
অর্থাৎ হে ইমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূল (সঃ) ডাকে সাড়া দাও যখন তাঁরা তোমাদেরকে আহবান করেন। (৮:২৪) জেনে রেখো, মসজিদ হতে যাবার পূর্বেই আমি তোমাদেরকে বলে দিচ্ছি, পবিত্র কুরআনের মধ্যে সবচেয়ে বড় সূরা কোনটি। অতঃপর তিনি আমার হাত ধরে মসজিদ হতে চলে যাবার ইচ্ছে করলে আমি তাঁকে তাঁর অঙ্গীকারের কথা স্মরণ করিয়ে দিলাম । তিনি বলেনঃ ঐ সূরাটি হলো “আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন” এটাই সাবআ মাসানী এবং এটাই কুরআন আযীম যা আমাকে দেয়া হয়েছে। এভাবেই এই বর্ণনাটি সহীহ বুখারী শরীফ, সুনান-ই-আবি দাঊদ এবং সুনান-ই- ইবনে মাজার মধ্যে অন্য সনদে বর্ণিত হয়েছে। ওয়াকেদী (রঃ) এই ঘটানাটি হযরত উবাই ইবনে কা’বের(রাঃ) বলে বর্ণনা করেছেন। মুআত্তা-ই-ইমাম মালিকে আছে যে, রাসুলুলাহ (সঃ) হযরত উবাই ইবনে কা’ব (রাঃ) কে ডাক দিলেন। তিনি নামায পড়ছিলেন। নামায শেষ করে তিনি রাসুললস্নাহ (সঃ)-এর সঙ্গে সাক্ষাত করেন। তিনি বলেনঃ তিনি(নবী সঃ) স্বীয় হাতখানা আমার হাতের উপর রাখলেন। মসজিদ হতে বের হতে হতে বলেনঃ ’আমি চাচিছ যে,মসজিদ হতে বের হওয়ার পূর্বেই তোমাকে এমন একটি সূরার কথা বলব যার মত
সূরা তাওরাত, ইন্জীল ও কুরআনে নেই। এখন আমি এই আশায় আস্তে আস্তে চলতে লাগলাম এবং জিজ্ঞেস করলাম ’ আল্লাহর রাসূল (সঃ)! সেই সূরাটি কি? তিনি জিজ্ঞেস করলেন নামাযের প্রারম্ভে তোমরা কি পাঠ করো ? আমি বললাম “আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন” তিনি বললেন এই সূরা সেটি। ’সাবআ মাসানী’ এবং কুরআন আযীম যা আমকে দেওয়া হয়েছে তাও এই সূরা বটে।এই হাদীসটির শেষ বর্ণনাকারী হলেন আবূ সাঈদ (রঃ)। এর উপর ভিত্তি করে ইবনে আসীর এবং তাঁর সঙ্গীগণ প্রতারিত হয়েছেন এবং তাঁকে আবূ সাঈদ বিন মুআল্লা মনে করছেন। এ আবূ সাঈদ অন্য লোক, ইনি খাসাইর কৃতদাস এবং তাবেঈগণের অন্তর্ভুক্ত। আর উক্ত আবূ সাঈদ বিন আনসারী (রাঃ) একজন সাহাবী।তাঁর হাদীস মুত্তাসিল এবং বিশুদ্ধ। পক্ষান্তরে এই হাদীসটি বাহ্যতঃ পরিত্যাজ্য যদি আবূ সাঈদ তাবেঈর হযরত উবাই (রাঃ) হতে শুনা সাব্যস্ত না হয় । আর যদি শুনা সাব্যস্ত হয় তবে হাদীসটি যথার্ততার শর্তের উপর নির্ভরশীল। আল্লাহ তা’আলাই এই সম্পর্কে সবচেয়ে ভালো জানেন।
এই হাদীসটির আর ও অনেক সূত্র রয়েছে। মুসনাদ-ই- আহমাদে রয়েছে হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসুলুল্লাহ (সঃ) হযরত উবাই বিন কা’বের (রাঃ) নিকট যান যখন তিনি নামায পড়ছিলেন। অতঃপর তিনি বলেনঃ হে উবাই (রাঃ)! এতে তিনি (তাঁর ডাকের প্রতি) মনোযোগ দেন কিন্তু কোন উত্তর দেন নি। আবার তিনি বলেনঃ হে উবাই (রাঃ)! তিনি বলেনঃ আসসালামু আলাইকা। রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেন ওয়া আলাইকাস সালাম। তারপর বলেনঃ হে উবাই (রাঃ)! আমি তোমাকে ডাক দিলে উত্তর দাওনি কেন ? তিনি বলেনঃ হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমি নামাযে ছিলাম। রাসুলুল্লাহ (সঃ) তখন উপরোক্ত আয়াতটি পাঠ করে বলেনঃ’’তুমি কি এই আয়াতটি শুননি’? তিনি বলেন’ হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! হাঁ (আমি শুনেছি) এরূপ কাজ আর আমার দ্বারা হবে না। রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ’ তুমি কি চাও যে, তোমাকে আমি এমন একটি সূরার কথা বলে দেই যার মত সূরা তাওরাত, ইঞ্জীল এবং কুরআনের মধ্যে নেই? তিনি বলেনঃ ’হাঁ অবশ্যই বলুন’। তিনি বলেনঃ এখান থেকে যাবার পূর্বে তা আমি তোমাকে বলে দিব। অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সঃ) আমার হাত ধরে চলতে চলতে অন্য কথা বলতে থাকেন, আর অমি ধীর গতিতে চলতে থাকি। এই ভয়ে যে না জানি কথা থেকে যায় আর রাসুলুল্লাহ (সঃ) বাড়ীতে পৌছে যান। অবশেষে দরজার নিকট পৌছে আমি তাঁকে তাঁর অঙ্গীকারে কথা স্মরণ করিয়ে দেই। তিনি বলেনঃ ’নামাযে কি পড়’ আমি উম্মুল কুরা’ পড়ে শুনিয়ে দেই।
তিনি বলেনঃ ’সেই আল্লাহর শপথ যাঁর হাতে আমার প্রাণ রয়েছে, এরূপ কোন সূরা তাওরাত, ইঞ্জীল এবং কুরআনের মধ্যে নেই। এটাই হলো ’সাবআ’ মাসানী’। জামেউত তিরমিযীর মধ্যে আরও একটু বেশী আছে। তা হলো এই যে, এটাই বড় কুরআন যা আমাকে দান করা হয়েছে। এই হাদীসটি সংজ্ঞা ও পরিভাষা অনুযায় হাসান ও সহীহ। হযরত আনাস (রাঃ) হতে এ অধ্যায়ে একটি হাদীস বর্ণিত আছে। মুসআদ-ই-আহমাদে হযরত আবদুল্লাহ বিন যাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ’ একদা আমি রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর নিকট আগমন করি। সে সময় সবেমাত্র তিনি সৌচ ক্রিয়া সম্পাদন করেছেন। আমি তিনবার সালাম দেই কিন্তু কোন উত্তর দিলেন না।তিনি তো বাড়ীর মধ্যে চলে গেলেন, আমি দুঃখিত, ও মর্মাহত অবস্থায় মসজিদে প্রবেশ করি। অল্পক্ষন পরে তিনি পবিত্র হয়ে আগমন করেন এবং তিনবার সালামের জওয়াব দেন। অতঃপর বলেন, ’হে আবদুল্লাহ বিন যাবির (রাঃ)! জেনে রেখো, সম্পূর্ণ কুরআনের মধ্যে সর্বোত্তম সূরা হলো “আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন” এই সূরাটি। এর ইসনাদ খুব চমৎকার। এর বর্ণনাকারী ইবনে আকীলের হাদীস বড় বড় ইমামগণ বর্ণনা করে থাকেন। এই আবদুলাহ বিন যাবির বলতে আবদী সাহাবীকে (রাঃ) বুঝানো হয়েছে। ইবনুল জাওযীর কথা এটাই। আল্লাহ তা’আলাই এই ব্যাপারে সবচেয়ে ভালো জানেন। হাফিজ ইবনে আসাকীরের (রঃ) অভিমত এই যে, ইনি হলেন আবদুল্লাহ বিন জাবির আনসারী বিয়াযী (রাঃ)।

No comments:

Post a Comment